ঢাকা, শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১০:৩৯ পূর্বাহ্ন
লালসবুজের পঞ্চাশে বিজয়ের মহোৎসব
ডেস্ক রিপোর্ট ::

‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি…’। শুধুই কি একটা গানের কলি? নাকি একটা জাতির আবেগ, ভালোবাসা আর গৌরবে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর শক্তি? নয় মাসের রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষে একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর জাতি পেয়েছিলো একটি পতাকা। পেয়েছিলো নিজেদের স্বতন্ত্র পরিচয়। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়েছিলো বাংলাদেশ নামে একটি জাতিরাষ্ট্র।

১৯৭১ থেকে ২০২১। পেরিয়ে গেছে ৫০টি বছর। হাটি হাটি পা পা করে সেদিনের সেই বাংলাদেশ পেরিয়ে এসেছে অনেকটা পথ। আজ সেই লাল সবুজ পতাকার স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আরেকটি বিজয় দিবসের সামনে।

এবারের বিজয় দিবস শুধুই একটি বিজয় দিবস নয়। বাংলাদেশ নামটা জন্মের ৫০ বছর, স্বাধীনতার ৫০ বছর, বিজয়ের ৫০ বছর। এর সাথেই আবার যখন যোগ হয় সেই বাঙালি জাতিকে মুক্তির স্বপ্ন দেখানো এক মহীরুহের জন্মশতবার্ষিকী। হ্যা, অন্য কেউ না, লাল সবুজের স্বপ্নদ্রষ্টা বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী- দুটো মিলিয়ে ২০২১ এর এই বিজয় দিবসটি যে আগের সব সময়ের চেয়ে একেবারেই অন্যরকম। স্মরণকালের সেরা এবারের বিজয় দিবসটি যে পুরো বিশ্বের সামনে অবিস্মরণীয় ভাবেই উদযাপন করতে চায় স্বাধীন বাংলাদেশের সরকার থেকে শুরু করে আপামর জনতা।

একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের উল্লাসে সাত কোটি মানুষ নেমে এসেছিলো এই বাংলার রাস্তায়, ২০২১ এ এসে এদেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্নও তো তেমনি। ’৭১-এর কোনো এক শীতের বিকেলে যেমন পুরো বিশ্ব দেখেছিলো একটি নতুন দেশকে, স্বাধীনতার এই ৫০ বছরে এসে আবার এই পৃথিবী দেখুক নতুন এক বাংলাদেশকে। স্বাধীনতার ’৫০এ এসে লাল সবুজের গর্জন উঠুক আরও একবার।

এবার তাই স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তির দিন তথা ১৬ ডিসেম্বর উদযাপিত হবে বাংলার ইতিহাসে স্মরণকালের সেরা বিজয়োৎসব। এবারের বিজয় দিবসে তাই থাকছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

বিজয় দিবসের মূল অনুষ্ঠান সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণিল কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠি হবে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে। এবার শুধু আমাদের দেশই না, বিজয় দিবস প্যারেডে অংশ নেবে ভারত, নেপাল, রাশিয়া, মেক্সিকো আর ইন্দোনেশিয়া। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সার্বিক সহায়তা করা ভারত ও রাশিয়ার ওয়ার ভেটেরানদের সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবার।

তেজগাঁও পুরান বিমানবন্দরের জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সকাল সাড়ে ১০টায় বীর মুক্তিযোদ্ধা, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, বিএনসিসি, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যা ব, আনসার ও ভিডিপি এবং কারারক্ষীদের অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ হবে। একই সঙ্গে থাকছে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাই পাস্ট ও অ্যারোবেটিক এয়ার শো। চলন্ত যান্ত্রিক সামরিক কন্টিনজেন্টের সালাম গ্রহণ ও কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করবেন রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ইতিমধ্যেই ভারতের রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ পৌছে গেছেন ঢাকায়। আসার কথা রয়েছে ভুটানের সাবেক রাজা (চতুর্থ) জিগমে সিঙ্গে ওয়াংচুকের। এছাড়াও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৭১ সালে দ্বিতীয় দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল ভারত। তাই দিনটিকে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রী দিবস হিসেবে উদযাপন করবে দুই দেশ। পৃথিবীর ১৮টি দেশের রাজধানীতে যৌথভাবে অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বাংলাদেশ ও ভারত। ১৮টি রাজধানীর ভেতর রয়েছে- জাকার্তা, সিঙ্গাপুর সিটি, ব্যাংকক, কুয়ালালামপুর, ক্যানবেরা, টোকিও, রিয়াদ, আবুধাবি, কাতার, মস্কো, লন্ডন, ব্রাসেলস, প্যারিস, জেনেভা, প্রিটোরিয়া, কায়রো, ওয়াশিংটন ও অটোয়া।

একাত্তরের রণাঙ্গণে এদেশের লাখো মানুষ ঝাপিয়ে পড়েছিলো দেশটাকে স্বাধীন করতে। নিজেদের রক্তের বিনিময়েই ছিনিয়ে এনেছিলো এক টুকরো মানচিত্র, একটা লাল সবুজের পতাকা। ৫০ পেরিয়ে এবারের বিজয় দিবসে আরেকটিবার সেদিনের সেই অনুপ্রেরণা ছুয়ে যাক বাংলার মাটির সন্তানদের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *