নড়াইলের হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্রধানশিক্ষক এস এম মমিনের আপন ভায়রা আমিন সর্দার। আশ্চর্য্যের বিষয় হলো তিনি ২০১৯ সালের ১৯ মার্চ মারা গিয়েছেন। এছাড়া সুজন গাঙ্গুলী নামে আরেক ব্যক্তি ম্যানেজিং কমিটির সদস্য। তিনি ১০ মাস আগে দপ্তরি পদে চাকরি পেলেও ম্যানেজিং কমিটি থেকে তার নাম বাদ দেওয়া হয়নি।
নড়াইলের হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষকের বিরুদ্ধে স্কুলের প্রতি অবহেলা, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়মন ও দুর্নীতির এমনই সব অভিযোগ উঠেছে। এসব অনিয়ম ও
দুর্নীতির প্রতিকার চেয়ে স্থানীয়রা জেলা প্রশাসক এবং জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৯৫ সালে প্রতিষ্ঠিত সদরের মুলিয়া ইউনিয়নের হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০ জন। প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে এস এম মমিন এখানে প্রধানশিক্ষক হিসেবে রয়েছেন। স্থানীয় হিজলডাঙ্গা, সিতারামপুর, বাশভিটা, ইচড়বাহা এবং দূর্বাজুড়ি গ্রামের ছেলেমেয়েরা এ স্কুলে লেখাপড়া করে। বিগত ৪ বছর বিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ের শিক্ষক না থাকলেও শূন্যপদের তালিকা শিক্ষা অফিসে কখনও পাঠাননি প্রধান শিক্ষক।
৫ মাস আগে প্রধানশিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে পরিচ্ছন্নকর্মী ও নৈশপ্রহরী নিয়োগের চেষ্টা করেন। পরে গ্রামবাসী এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় অবৈধ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। ৩ বছর ধরে স্কুলের টিউবওয়েল নষ্ট হলেও তা মেরামত করে দেওয়া হয়নি।
হিজলডাঙ্গা গ্রামের মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, তার কাছ থেকে ২০১০ সালে লাইব্রেরিয়ান পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রধানশিক্ষক ২ লাখ টাকা নিয়েও সে টাকা ফেরত দেননি। চাইলে তিনি সব সময় বলেছেন দেবো। এভাবে ১২ বছর ধরে ঘোরাচ্ছেন।
হিজলডাঙ্গা গ্রামের প্রলব রায় জানান, ৯ ফেব্রুয়ারি বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। নতুন কমিটি গঠনের লক্ষ্যে দু’মাস আগে বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের নিয়ে প্রধানশিক্ষকের উপস্থিতিতে এক সভায় অংশ বিশ্বাস, অমিত বিশ্বাস, অনিমেশ রায়, দ্রুব শাখারি ও দিপ্তী রাণী রায়কে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মনোনীত করা হলে প্রধানশিক্ষক এই ৫ জনের প্রত্যেকের কাছ থেকে নির্বাচনী খরচের কথা বলে ৩ হাজার করে ১৫ হাজার টাকা নিয়েছেন।
স্থানীয় সিতারামপুর গ্রামের অমিত বিশ্বাস জানান, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর স্থানীয় হিজলডাঙ্গা পাগলচাঁদ মন্দিরে স্থানীয় স্কুলের চলমান সংকট নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে বিদ্যালয়ের বর্তমান সভাপতি যতীন্দ্রনাথ মহলদার ও প্রধান শিক্ষক এস এম মমিন উপস্থিত ছিলেন। সভায় সভাপতি ও প্রধানশিক্ষক তাদের বিভিন্ন দোষ স্বীকার করে স্কুল ঠিকমতো পরিচালনা করবেন বলে সবার সামনে কথা দিলেও পরে তারা আর করেননি। সেই সভায় স্কুলের দেখভালের জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট একটি উপকমিটি গঠন করা হলেও প্রধানশিক্ষক তাদের কোনো প্রকার গুরুত্ব দেননি।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য অজিত কবিরাজ বলেন, গত দু’বছর ম্যানেজিং কমিটির কোনো মিটিং হয়নি এবং আমাকে ডাকা হয়নি। মাঝে মধ্যে স্কুলের পিওন বাড়িতে এসে খাতায় স্বাক্ষর করে নিয়ে যায়। ৫ মাস আগে স্কুলের নিয়োগ সংক্রান্ত একটি বিষয়ে স্বাক্ষর করাতে আসলে আমি পিওনকে ধমকও দিয়েছি।
হিজলডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক এস এম মমিন বিভিন্ন অভিযোগের কথা অস্বীকার করে বলেন, আমি দু’মাস ধরে অসুস্থ। প্রতিষ্ঠানে যেতে পারছি না।
আপন ভায়রার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তিনি এখন সদস্য নেই। তিনিতো মারা গিয়েছেন।
তাহলে বিদ্যোৎসাহী সদস্য হিসেবে কে আছেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, স্বপন নামে একজন বিদ্যোৎসাহী সদস্য। স্বপনের বিস্তারিত পরিচয় আমার ভালো করে স্মরণ নেই, বিদ্যালয়ের ক্লার্ক বলতে পারবে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি যতীন্দ্রনাথ মহলদার বলেন, স্কুলের তেমনতো কোনো অনিয়ম দেখি না। করোনার কারণে প্রায় সময় স্কুল বন্ধ থাকে। ঠিকমতো পাঠদান হয় না। একটি নিয়োগ প্রক্রিয়া ছিল তা গ্রামবাসীর হট্টগোলের কারণে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। স্কুলে বিভিন্ন সমস্যা থাকতে পারে, মানিয়ে নিয়ে চলতে হয়।
এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এস এম ছায়েদুর রহমান বলেন, রোববার (৬ ফেব্রুয়ারি) স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি সম্পর্কে স্থানীয় গ্রামবাসীদের দেওয়া একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
Leave a Reply