ঢাকা, শুক্রবার ২৬ জুলাই ২০২৪, ০৫:২৬ অপরাহ্ন
ভোট দিলেও চেয়ারম্যান, না দিলেও চেয়ারম্যান: আ.লীগ প্রার্থী
ডেস্ক রিপোর্ট ::

‘সময় আছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করুন। অযথা টাকা খরচ করবেন না, আমারও ২০-২৫ লাখ টাকা খরচ করাবেন না। নির্বাচন কেমনে করতে হয়, সেটা আমি জানি। সাধারণ মানুষ ভোট দিলেও চেয়ারম্যান, আর না দিলেও চেয়ারম্যান। তাই আবারও বলছি। সময় থাকতে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান, ভালো হবে। নইলে শত্রুতা সৃষ্টি হবে। আমি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হতে চাই।’

সভা-সমাবেশে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের প্রকাশ্যে এভাবেই হুঁশিয়ার করছেন লক্ষ্মীপুর সদরের চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী আবু ইউসুফ ছৈয়াল। ওই ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যানও তিনি।

চতুর্থ ধাপে চররমনী মোহন ইউনিয়ন পরিষদে ভোট ২৬ ডিসেম্বর।

ইউনিয়নের মজুচৌধুরীর হাট পূর্ব বাজারে বুধবার রাতে জনসভায় ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী সালেহ আহম্মদকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে নাম ধরে হুমকি দেন আবু ইউসুফ। জনসভার একটি ভিডিও ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে।

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের ভোট থেকে সরে দাঁড়াতে হুমকি দিচ্ছেন তিনি। সমাবেশে আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

গত বৃহস্পতিবার রাতে মজুচৌধুরীর হাটের বিভিন্ন স্থানে প্রতিপক্ষদের একই হুমকি দেন আবু ইউসুফ। তার কথার শেষ গিয়ে থামে, বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় চেয়ারম্যান হওয়ার বাসনায়। অন্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র উঠিয়ে নিতে প্রকাশ্যে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।বলছেন, নির্বাচনি মাঠে কোনো প্রার্থী না থাকলে তার ১৫-২০ লাখ টাকা বেঁচে যাবে, তা না হলে প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে বিরোধ হবে।

স্থানীয়রা জানান, দল থেকে নৌকা প্রতীক পেলেও এলাকায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে আবু ইউসুফের জনপ্রিয়তা তলানিতে ঠেকেছে। এলাকায় দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝেও তাকে নিয়ে অসন্তোষ বিরাজ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে পরাজয় নিশ্চিত জেনে নির্বাচনি মাঠে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চাচ্ছেন না তিনি।

প্রতীক না পেয়েও আচরণবিধি লঙ্ঘন করে মজুচৌধুরীর হাটে নির্বাচনি জনসভায় আবু ইউসুফ বলেন, ‘আপনারা চিন্তা ভাবনা করুন। এখন কিছু বলব না। নির্বাচনের পর আপনাদের সঙ্গে মাদ্রাসা-মসজিদে দেখা হবে।

‘সেদিন আপনাদের সঙ্গে কথা হবে। আপনারা আমাদের পূর্ণ ২০ লাখ টাকা অপচয় করেছেন। এখনও সময় আছে, সময় থাকতে চিন্তা করুন। আমাদের টাকাগুলো খরচ করাবেন না, পয়সা খরচ করা শয়তানের লক্ষণ। এ টাকাগুলো খরচ না করে সৎ পথে, মাদ্রাসা, মসজিদে খরচ করতে আমরা রাজি।’

জনসভায় তিনি আরও বলেন, ‘চরমোনাই ভাইয়েরা, আপনাদের এখনও সময় আছে, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করেন। আমাদের টাকা-পয়সা আর আপনারা খরচ করাবেন না। খরচ করালে আপনাদের সঙ্গে আমাদের একটা শত্রুতা সৃষ্টি হবে।’

এ ব্যাপারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি মো. ইব্রাহিম বলেন, ‘নির্বাচন থেকে সরে যেতে নৌকার প্রার্থী শুধু প্রকাশ্যে নয়, বিভিন্ন মাধ্যমে আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। তারা খালি মাঠে গোল দিতে চান।’

আবু ইউসুফ বলেন, ‘নির্বাচনের নামে টাকা অপচয় করে লাভ কী। আমার ১৫-২০ লাখ টাকা খরচ হবে। তাই বলেছি, টাকাগুলো খরচ করে কী লাভ। আমি দুবার জয়ী হয়েছি। আগেও আমার সঙ্গে বিএনপি এবং দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন, কিন্তু নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে।’

রিটার্নিং অফিস সূত্রে জানা গেছে, চররমনী মোহন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে পাঁচ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এদের মধ্যে আওয়াম লীগ মনোনীত আবু ইউসুফ ছৈয়াল, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. সালেহ আহম্মেদ, স্বতন্ত্র ছায়েদুর রহমান খলিফা, মো. মনিরুল ইসলাম ও মো. আব্দুল কাদের।

আগামী ৬ ডিসেম্বর মনোননয়পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন। ৭ ডিসেম্বর প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে।

রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দেবেশ কুমার সিংহ জানান, প্রতীক বরাদ্দের আগে নির্বাচনি প্রচারণা আচরণবিধি লঙ্ঘন। এ ছাড়া এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে নির্বাচন থেকে সরে যেতে বলতে পারেন না। এটিও আচরণবিধি লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। কোনো প্রার্থী তথ্য-প্রমাণসহ লিখিত অভিযোগ দিলে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে।

লক্ষ্মীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জসিম উদ্দিন জানান, ছৈয়াল ও তার ভাতিজাদের বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা ও চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। সবশেষ ১৬ জুন আব্দুস সহিদ নামে এক জেলেকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগে ছৈয়াল ও তার ছেলে আবু সুফিয়ানসহ ১৩ জনের নামে সদর থানায় হত্যা মামলা হয়েছে।

ওসি জসিম জানান, গত বছরের ২২ জুলাই তার পুত্রবধূ সুমাইয়া ইসলাম শান্তা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় চেয়ারম্যান ছৈয়াল ও তার ছেলে আবু সুফিয়ানকে আসামি করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *