ঢাকা, শনিবার ২০ জুলাই ২০২৪, ০৯:২১ অপরাহ্ন
আদালতে কাঁদলেন ওসি প্রদীপ, ‘ছেলে-স্ত্রী’র শপথ, আমি কিছু করিনি
ডেস্ক রিপোর্ট ::

চাঞ্চল্যকর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলায় বহিস্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশকে জড়িয়ে দেয়া অভিযোগপত্রকে মনগড়া, বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে দাবি করে প্রদীপের আইনজীবী রানা দাশ গুপ্তের জেরার জবাবে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা র‌্যাব-১৫ এর সাবেক সহকারি পুলিশ সুপার খায়রুল ইসলাম বলেন,‘সঠিক তদন্ত করে এবং সাক্ষীদের সরাসরি বক্তব্যে মেজর সিনহা হত্যাকান্ডে প্রদীপের সরাসরি সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। প্রদীপ সম্পূর্ণ নিরাপরাধ, নির্দোষ হওয়া সত্বেও স্বার্থান্বেষি মহলের পারস্পারিক যোগসাজসে অভিযোগপত্রে আসামী প্রদীপকে জড়ানোর দাবি সত্য নয়।

এ সময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ওসি প্রদীপ কুমার দাশ কান্না শুরু করেন।

প্রদীপ বিচারকের উদ্দেশ্যে কান্নারত অবস্থায় বলেন, ‘স্যার, আমার ছেলের শপথ, আমার স্ত্রীর শপথ, আমি কিছুই করি নাই।’

এসময় আদালতের বিচারক ওসি প্রদীপকে বলেন, ‘আপনাকে আরও প্রশ্ন করব আপনি শান্ত হোন।’

আদালত সুত্র জানায়, আজ সোমবার (২৯ নভেম্বর) সকাল দশটার দিকে ৮ম ধাপে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার অসমাপ্ত জেরা শুরু হয়।

আসামী লিয়াকতের পক্ষে নিযুক্ত চট্টগ্রাম বারের সিনিয়র আইনজীবী চন্দন দাশের অনুপস্থিতিতে অ্যাডভোকেট আরিফুল ইসলাম অসমাপ্ত জেরার জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা খায়রুল ইসলাম বলেন,‘আমি মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের ঘটনায় তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে পুরোদমে তদন্ত করেছি এবং তদন্তের মাঝখানে কোন বিরতি পড়েনি। মামলার সাক্ষীরা তদন্তকালে অনেক বক্তব্য দিয়েছেন। আমি তদন্তের স্বার্থে আমার বিবেচনায় সংক্ষেপ করে লিপিবদ্ধ করেছি এবং আমার তদন্তের ধরণ এরকম।’

পরে অ্যাডভোকেট রানা দাশ গুপ্তের দীর্ঘ জেরার জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা আদালতে বলেন, সাক্ষী ছেনুয়ারা, হামজালাল, আলী আকবর, ছালেহ আহমদ ও বেবী বেগমেকে ওসি প্রদীপ বিভিন্ন মামলায় আসামী করেছেন। ওই সাক্ষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন এবং তাদের আত্মীয়স্বজন ক্রসফায়ারের সম্মুখিত হয়েছেন- এমন দালিলিক প্রমাণ আছে।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও বলেন, প্রথমে টেকনাফ থানার তৎকালিন এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত ভিকটিম সিনহার ক্যামেরা এবং মোবাইল জব্দ করেন এবং পরবর্তীতে এসআই সাব্বির ও ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়ার মাধ্যমে জব্দকৃত আলামত আমার হাতে আসে। ঘটনার দুইসপ্তাহ পর আমি হত্যাকান্ডের তদন্তের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হই এবং এ কারণে আমি ভিকটিমের ক্যামেরা ও মোবাইল ফরেনসিক পরীক্ষার প্রয়োজনীয়তাবোধ করিনি।

সোমবার সকাল থেকে দুপুরের এক ঘন্টার বিরতি দিয়ে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তদন্ত কর্মকর্তাকে জেরা করেন আসামী লিয়াকত ও প্রদীপের আইনজীবীগণ।

পরে জেরা অসমাপ্ত রেখে আদালতের ওই বিষয়ে কার্যক্রম মুলতবি ঘোষণা করেন মামলার বিচারক কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল।

মামলাটির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ও কক্সবাজার আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) ফরিদুল আলম জানান, এ মামলায় এখন পর্যন্ত ৬৪ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে।

এর আগে, সকাল সাড়ে ৯টায় ওসি প্রদীপসহ মামলার ১৫ আসামিকে কড়া নিরাপত্তায় আদালতে নিয়ে আসা হয়।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। হত্যার পাঁচদিনের মাথায় ৫ আগস্ট সিনহার তাঁর বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশসহ ৯ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ হত্যাকান্ডের ঘটনায় চার মাসের বেশি সময় ধরে চলা তদন্ত শেষে গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর ৮৩ জন সাক্ষীসহ আলোচিত মামলাটির অভিযোগপত্র দাখিল করেন র‍্যাব-১৫ এর সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। ১৫ জনকে আসামি করে দায়ের করা অভিযোগপত্রে সিনহা হত্যাকান্ডকে একটি ‘পরিকল্পিত ঘটনা’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

C-কক্সবাজার ভিশন 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *